চিত্র-১
৫ অক্টোবর, ২০১০ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধে ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০’ জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে। উল্লেখ্য যে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন থাকা সত্তে¡ও তা পারিবারিক নির্যাতন মোকাবেলায় অকার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে এই আইনটি প্রণীত হয়। কেননা এছাড়া দেশের প্রচলিত দেওয়ানি ও ফৌজদারী আইনেও পারিবারিক সহিংসতাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়নি। ফলে প্রচলিত আইনের আওতায় লোকচক্ষুর আড়ালে সংঘটিত অধিকাংশ পারিবারিক নির্যাতনের প্রতিকার চাওয়া নারীর জন্য অত্যন্ত দূরুহ ব্যাপার ছিল। এই আইনে পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের পাশাপাশি নারীর সুরক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। যে কারণে এমন ধরণের সহিংসতার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীকে হয় যৌতুক নিরোধ আইন নতুবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের দ্বারস্থ হতে হতো। এমতাবস্থায় নির্যাতনের সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ উত্থাপন করতে না পারায় নির্যাতন হওয়া সত্তে¡ও নারীকে সুবিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতে হতো। এসব বিষয়কে সামনে রেখে আসক (আইন ও সালিশ কেন্দ্র) সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও নারী নেত্রীবৃন্দ পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে একটি নতুন আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় পাস হয় বর্তমান আইনটি।
সহিংসতামুক্ত ও স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারাটা যে নারীর অধিকার নতুন এই আইনে এ বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে। পাশাপাশি এই আইনে একজন নারীর যৌথগৃহে বসবাসের অধিকার, নির্যাতিত হওয়ার আগেই আইনের আশ্রয় তথা নারীর জন্য আইনি সুরক্ষা বলয় তৈরীর সুযোগ থাকছে, যা ইতোপূর্বে অন্য কোনো আইনে ছিল না। তাই বর্তমান আইনটি এ যাবৎকালের নারী অধিকার তথা মানবাধিকার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চিত্র-২
আইনে যা আছে
পারিবারিক সহিংসতার শিকার কোনো নারীর এই আইন অনুসারে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। পাশাপাশি আইনগত সহায়তার সাথে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির সুযোগ তথা সেবাও পাবেন ক্ষতিগ্রস্থ নারী। তবে এই জন্য আদালতে তাকে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি আবেদন পত্রের সঙ্গে উপস্থাপিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, তার ওপর পারিবারিক সহিংসতা ঘটেছে, তা হলে অন্ত:বর্তীকালীন সুরক্ষার আদেশ দিতে পারবেন। এ ব্যাপারে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে নোটিশ দিতে পারবেন। আর নোটিশ প্রাপ্তির সাতদিনের মধ্যে অভিযুক্তকে কারণ দর্শাতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ নারী আদালতের কাছে ক্ষতি পূরণের জন্য আদেশ চাইতে পারবেন। আইনে অভিযোগ নিস্পত্তি করার জন্য সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, ৬০ দিনের মধ্যে আদালতকে অভিযোগের নিস্পত্তি করতে হবে। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করতে হবে বা মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। কোনো আবেদন বা কার্যধারা নিস্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারীর কার্যবিধির অনুসরণ করা যাবে। এই আইনে আরও বলা হয়েছে , প্রতিপক্ষ আদালতে উপস্থিত না হলে আদালত প্রতিপক্ষের অনুপস্থিতিতে একতরফা ভাবে মামলাটি নিস্পত্তি করতে পারবেন। অর্থাৎ প্রতিপক্ষের অনুপস্থিতিতে বিচার করা যাবে। আইনে বলা হয়েছে, আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারবেন। এ অপরাধ জামিনযোগ্য এবং অপসরণযোগ্য। সুরক্ষা আদেশ বা তার কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। এজন্য ৬ মাস কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। অপরাধ পুনরাবৃতির ক্ষেত্রে অনধিক দুই বছর কারাদন্ড বা অনাধিক এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডভোগ করবেন। তবে কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করেন এবং আদালতে যদি তা মিথ্যা প্রমাণ হয় তবে আদালত আবেদনকারীকেও এক বছর কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করতে পারবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন