১ নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেতঃ (১ নং দূরবর্ত সতর্ক সংকেতটি দুরবর্তী সমুদ্রের জন্য ) দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড়ো হাওয়ার রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬১ :কি: মি: যা সামুদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে। বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর জাহাজটি দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়া সম্মুখীন হতে পারে। সংশ্লিষ্টদের সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহবান তরা হবে।
২ নং দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেতঃ (২ নং দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত সামুদ্রের জন্য ) দূর গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে । সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কি: মি: । বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না , তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে ঝড়ো হাওয়ায় পড়তে পারে । মাছ ধরার নৈৗকা ট্রলার সমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে হবে যাতে স্বল্প সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
৩ নং স্থানীয় সতর্ক সংকেতঃ (৩নং সতর্ক সংকেতটি সমুদ্র বন্দর ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য) বন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেগে পারে এবং এর একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ৪০-৫০ কি: মি: হতে পারে। ঝড়ো হাওয়ার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী ৬৫ ফুট এবং এর নিম্নে দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নৌ-যান মাছ ধরার নৌকা ট্রলার সমূহকে অতি সত্তর নিরাপদ আশ্রয় নিতে হবে।
৪ নং হুঁশিয়ারি সংকেতঃ (৪ নং হুঁসিয়ারী সংকেত সমুদ্র বন্দর ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য) বন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকা ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভব্য গতিবেগ ঘন্টায় ৫১-৬১ কি: মি: তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপদজনক সময় এখনো আসেনি। ১৫০ ফুট এর নিম্নের দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট যে সকল নৌ-যান ৬১ কি: মি: বেগে প্রবাহিত ঝড়ো হাওয়া প্রতিরোধ সক্ষম নয় সে সকল নৌ-যানকে অনতিবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
৬ নং বিপদ সংকেতঃ (৬ নং বিপদ সংকেত) মাঝারি তিব্রতার সম্পন্ন সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করবে। মাঝারি ধরণের এ ঘুর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কি মি: হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
৮ নং মহাবিপদ সংকেতঃ (৮ মহাবিপদ সংকেত) প্রচন্ড তিব্রতা বিশিষ্ট একটি সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে বন্দরে অতি তীব্র ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করবে। প্রচন্ড এ ঘূর্ণিড়ের বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৯৮-১১৭ কি: মি: হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরের সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমুহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
৯নং মহাবিপদ সংকেতঃ (৯নং মহাবিপদ সংকেত) অতি প্রচন্ড তীব্রতা বিশিষ্ট একটি সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে বন্দর তৎসংলগ্ন এলাকায় অতি তীব্র ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করবে। হ্যারিকেনের তীব্রকায় প্রবল এ ঘূূর্ণঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১১৮-১৭০ কি: মি: হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরের সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নিদ্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
১০নং মহাবিপদ সংকেতঃ (১০নং মহাবিপদ সংকেত) অতি প্রচন্ড তীব্রতাসহ সুপার সাইক্লোন এর তীব্রতা বিশিষ্ট প্রচন্ডতম একটি সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অতি তীব্র ঝঞ্ঝবিক্ষুদ্ধ ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করবে। সর্বোচ্চ তীব্রতা বিশিষ্ট এ ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১৭১ কি: মি: বা আরও বেশি হতে পারে । । উত্তর বঙ্গোপসাগরের সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নিদ্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
১১ নং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংবাদ
দুর্যোগ মোকাবেলায় সতর্ক সংকেতসমূহে করণীয়
১ নং নৌ সতর্ক সংকেতঃ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঘন্টায় ৪০-৪৫ কি: মি: বেগের ঝড়ো হাওয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে । ঝড়ো হাওয়ার কারণে নদীতে চলাচলকারী ৬৫ ফুট এবং এর নিম্নের দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নৈৗ -যান গুলকে অতি সত্বর নিরাপদ আশ্রয় যেতে হবে। ২নং নৌ হুঁশিয়ারি সংকেতঃ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঘন্টায় ৫১-৬১ কি: মি: বেগে অস্থায়ী ঝড়ো বা সমুদ্রিক ঝড় বা কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানতে পারে । ১৫০ ফুট এবং তার নিম্নের দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট যে সকল নৌ-যান ৬১ কি: মি: / ঘন্টা বেগে প্রবাহিত ঝড়ো হাওয়া প্রতিরোধে সক্ষম নয় সে সকল নৌ-যা কে অনতিবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয় যেতে হবে। ৩ নৌ বিপদ সংকেতঃ সংশ্লিষ্ট এলাকায় একটি মাঝারি ধরণের ঘুর্ণিঝড় বা কালবেশাখী ঝড় আঘাত হানতে পারে । এত বাতাসের গতিবেগ ঘন্টা ৬২-৮৮ কি: মি: হতে পারে। সকল নৌ-যানকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশায়ে থাকতে হবে। ৪ নং নৌ মহাবিপদ সংকেতঃ সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রচন্ড তীব্রতা বিশিষ্ট একটি ঘুর্ণিঝড় বা কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানতে পারে । এতে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯-১১৭ কি: মি: হতে পারে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সকল নৌ-যানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
ঘূর্ণিঝড়ে পতাকা উত্তোলন পদ্ধতিঃ
- ১-৪ নং হুশিয়ারী সংকেত এর জন্য ১টি পতাকা উত্তোলিত হবে।
- ৬ নং হুশিয়ারী সংকেতের জন্য ২টি পতাকা উত্তোলিত হবে।
- ৮-১০ নং মহাবিপদ সংকেতের জন্য ৩টি পতাকা উত্তোলিত হবে।
দুর্যোগ পূর্ব প্রস্তুতিঃ
১. নিয়মিত আবহাওয়ার খবর শোনা
§ বাড়িতে একটি রেডিও রাখতে হবে। বিপদেও কথা মনে রেখে ঘওে অতিরিক্ত ব্যাটারি মজুত রাখা দরকার।
§ গভীর সমুদ্রে চলাচলকারী জেলেদের নৌকা ও নৌযানে রেডিও রাখতে হবে। রেডিওতে নিয়মিত আবহাওয়ার খবর শুনতে হবে।
§ যদি রেডিও না থাকে তবে যাদের রেডিও আছে তাদের কাছ থেকে আবহাওয়ার খবর জেনে নিতে হবে।
§ বিপদ সংকেতের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিপদ সংকেতের মাত্রা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
§ যাদের মোবাইল আছে তারা আত্বীয় স্বজনকে বিপদের কথা জানাতে পারেন। যেন জরুরি মুহুর্তে তারা সাহায্য করতে পারেন।
২. স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন
§ প্রত্যেক পাড়ায় একটি করে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে হবে। এই দলটি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসের পর আহত মানুষদের প্রাথমিক চিকিৎসা করবে। তাছাড়া যে কোন ধরনের বিপদে এই স্বেচ্ছাসেবক দল গ্রামের মানুষদের সাহায্য করবে।
§ দলের সবাইকে সাহসী ও কর্মঠ হতে হবে।
§ দলটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও সহজ রোগ নিরাময়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
§ প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য স্থানীয় এনজিও দের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
§ চর এলাকায় গবাদি পশু আশ্রয় নেয়ার জন্য মাটির কেলন্ডা তৈরি করতে হবে।
৩. নিয়মিত বাড়ির ভিটা তৈরি
§ নিয়মিত বাড়ির ভিটা তৈরি না করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়।
§ মাটি ফেলে বাড়ির ভিটা উঁচু করতে হবে। নতুন বাড়ি তৈরি করার সময় ভিটা উঁচু করার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
§ ঘরের টানা এবং বাঁধন শক্ত করে দিতে হবে।
§ বাড়ির চারদিকে ঘন করে কয়েকটি সারিতে গাছ লাগাতে হবে। এগুলি বড় হলে বাড়ির চারিদিকে গাছের দেয়াল তৈরি করতে হবে। এই গাছের দেয়াল ঘূর্ণিঝড় ও জলচ্ছাসের ঝাপটা থেকে বাড়ি ঘর রক্ষা করবে।
§ আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, টিন ইত্যাদি ভালভাবে গুছিয়ে ঘরেরর ভেতরে রাখতে হবে। কারণ, ঘূর্ণিঝড় এলে এগুলো প্রচন্ত বাতাসে উড়ে গিয়ে মানুষকে জখম করতে পারে।
৪. গাছ লাগান
§ বাঁধের বাইরে এবং ভেতরের এলাকায় গাছ লাগাতে হবে। গাছ লাগিয়ে গাছের বেষ্টনী বা দেয়াল গড়ে তুলতে হবে। গাছের দেয়াল তৈরি করলে ঘূর্ণিঝড় ও জলচ্ছাসের হাত থেকে বাঁচা যায়।
§ বাড়ির আশে পাশে বসত ভিটার যে কোন ধরনের শক্ত গাছ লাগাতে হবে।
§ পুকুরের পাড়ে গাছ লাগাতে হবে।
§ পতিত জমিতে গাছ লাগাতে হবে।
§ খালের পাড়ে, পথের ধারে গাছ লাগাতে হবে।
§ উপকূল এলাকার বেঁড়ি বাঁধের যত নিতে হবে। বেঁড়ি বাঁধ যেন নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫. শুকনো খাবার, চাল, ডাল, পানি, দেশলাই ও মোমবাতি সংরক্ষণ
§ ঘরের মেঝে গর্ত করে প্রয়োজনীয় জিনিস সংরক্ষণ করা যায়।
§ শুকনো খাবার, যেমন-রুটি, চিড়া, খই, মুড়ি ও গুড় পলিথিনের ব্যাগে ভরে ভালো করে মুখ বাঁধতে হবে। পলিথিনের ব্যাগ না থাকলে হাঁড়ি, মটকা বা টিনে খাবার রাখা যায়।
§ খাবারের ব্যাগ, হাড়ি, মটকা বা টিন গর্তের মধ্যে রাখতে হবে। তারপর ভাল করে মাটি চাপা দিতে হবে। একই ভাবে চাল, ডাল ও পানি ভর্তি জেরিকেন বা প্লাস্টিকের ড্রামে রাখা যায়।
§ খাবারের ব্যাগ বা হাঁড়ির মধ্যে একটি দেশলাই এবং মোমবাতি রাখতে হবে। তবে দেশলাই ও মোমবাতি আলগা কাগজ দিয়ে জড়িয়ে নেয়া ভাল।
§ পানি সরে গেলে এই খাবার খেয়ে খাবারের সংকট মোকাবেলা করা যায়।
§ মোমবাতি ও ম্যাচ আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা যায়।
৬. যেসব জিনিস ধরে ভেসে থাকা যায় তা সংরক্ষণ করা
§ হাতের কাছে লাইফ বয়া, বাতাস ভর্তি গাড়ির পুরনো টিউব, প্লাস্টিকের ড্রাম ইত্যাদি রাখতে হবে। জলোচ্ছ¡াসে ভাসিয়ে নিয়ে গেলে এগুলো ধরে ভেসে থাকা যায়।
§ লাইফ বয়া, বাতাস ভর্তি গাড়ির পুরনো টিউব, প্লাস্টিকের ড্রাম না থাকলে কলা গাছ বা গাছের গুড়ি কেটে তৈরি রাখতে হবে যেন জলোচ্ছাসের সময় এগুলো ধরে ভেসে প্রাণ রক্ষা করা যায়।
৭. টিউবওয়েল সংরক্ষণ
§ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আগে/বিপদ সংকেত বুঝে, টিউবওয়েলের উপরের অংশটি খুলে ফেলতে হবে
§ টিউবওয়েলের মাটির উপরের অংশটি ভালোভাবে পলিথিন দিয়ে মুড়ে বেঁধে রাখতে হবে।
§ উপরের অংশটি গাছের সাথে শক্ত দড়ি দিয়ে ভালো করে বেঁধে রাখতে হবে।
৮. আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ
§ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস শুরুর আগেই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হবে।
§ রেডিও, রেডক্রিসেন্ট কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা যেসব নির্দেশ দেয় তা পালন করতে হবে।
§ আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া যায় এমন প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে নিতে হবে। শুকনো খাবার, পানি, শিশু ও অসুস্থদের জন্য বিছানাপত্র সাথে নিতে হবে।
§ যা কিছু আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় সেগুলি শক্ত গাছের সাথে মজবুত করে বেঁধে রাখতে হবে।
§ গবাদি পশু কিলায় নিয়ে ছেড়ে দিতে হবে।
§ আশ্রয় কেন্দ্রে শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী মা ও অসুস্থদের সহায়তা করতে হবে।
§ আশ্রয় কেন্দ্রে যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করা উচিত নয়।
৯. কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ
§ পলিথিন ব্যাগে কয়েকটি রুটি বা শুকনো খাবার ভরতে হবে। তারপর সেই পলিথিন ব্যাগটি শরীরের সাথে বেঁধে রাখতে হবে। জলোচ্ছাসের পর এই খাবার খাওয়া যাবে।
§ মেয়েদের শক্ত করে খোঁপা করতে হবে। খোঁপার উপর গামছা বা শক্ত পাতলা কাপড় দিয়ে বাঁধতে হবে। কারণ প্রবল বাতাসে এবং পানির ঝাপটায় চুল অন্য কিছুর সাথে আটকে যেতে পারে। এর ফলে অনেক সময় বড় ধরনের বিপদও হতে পারে।
§ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আগে মেইন সুইচ বন্ধ করতে হবে।
§ ঝড় থেমে গেলেই আশ্রয় কেন্দ্র ত্যাগ করা উচিত নয়। কেননা একটি ঝড় থেমে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আবার আরেকটি ঝড় আঘাত আনতে পারে।
১০. বাড়ির কাছে আশ্রয় কেন্দ্র না থাকলে করণীয়
§ অনেকেই বেঁড়িবাঁধের বাইরে অথবা নিচু অঞ্চলে বসবাস করে। বিপদ সংকেত শোনার পর বেড়ি বাঁধের ভিতরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসতে হবে।
§ বাড়ির কাছে কোন পাকা দালান থাকলে সেখানে আশ্রয় নিতে হবে।
§ ঘরের কাছাকাছি কোন শক্ত ও বড় গাছে গড়ির মই ঝুলিয়ে রাখতে হবে। এই দড়ির মই বেয়ে গাছে উঠে প্রাণ রক্ষা করা যায়।
§ গাছে উঠে কোনো শক্ত ডালের সাথে নিজেকে শক্ত করে বেঁধে রাখতে হবে।
দুর্যোগকালীন করণীয়
§ বিপদ সংকেত পাওয়ার পর পরই বাড়ির নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেও আগেভাগে নিকটবর্তী নিটকবর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করা।
§ বাড়ি ছাড়ার সময় আগুন নিভিয়ে যাওয়া, গ্যাস লাইন বন্ধ করা ও বিদ্যুতের মেইন সুইজ বন্ধ করে যাওয়া।
§ গ্রামের/মহল্লার লোকদের সাথে পরামর্শক্রমে বাড়ি পাহাড়া দেয়া।
§ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, তাদের পরামর্শ মেনে চলা।
§ কোন প্রকার নৌযান এ সময় না চলা।
§ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, দলিল পত্র, টাকা পয়সা সাথে নেয়া অথবা পলিথিনে মুড়ে মাটিতে পুতে রাখা।
§ চাল, ডাল, ম্যাচ, শুকনো কাঠি, পানি, ফিটকারি, চিনি, গুড়ো দুধ, ব্রান্ডেজ, তুলা, ওরস্যালাইন পলিথিন ব্যাগে ভরে গর্তে পুঁতে রাখা। কলসিতে পানি ভরে মুখ পলিথিন দিয়ে বেঁধে গর্তে পুতে রাখা।
§ গবাদি পশু গোয়াল ঘরে না রেখে নিকটস্থ উচু জায়গা বা মাটির কেলায় রাখা।
§ হাঁস মুরগি খাঁচায় ভরে গাছের উপর শক্ত ডালে বেঁধে রাখা।
§ মহা বিপদ সংকেত পাওয়ার পর ট্রলার, নৌকা নিকটস্থ কোন জলাভূমিতে বা পুকুরে মাটি চাপা দিয়ে ডুবিয়ে খঁটার সাথে বেঁধে রাখা।
§ ঝড় সম্পূর্ণ না থামা পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র থেকে না বের হওয়া।
§ বাড়ির আশে পাশের গাছের ঢাল কেটে দেয়া হয়, যাতে বাতাসে গাছের ঢাল ভেঙ্গে না পরতে পারে।
§ রেডিও ও টেলিভিশনে প্রাপ্ত নির্দেশ কানায় কানায় মেনে চলা।
§ জেলেদের জাল গাছের সাথে শক্ত করে পেঁচিয়ে বেঁধে রাখা।
§ টিউবওয়েলের মাথা খুলে রাখা ও মুখ শক্ত করে পলিথিন দিয়ে বেঁধে রাখা।
§ আশ্রয় কেন্দ্র না থাকলে গ্রামের সবচেয়ে শক্ত/মজবুত ঘরে
দু দুর্যেোগ পরবর্তী করণীয়
১. আহতদের উদ্ধার, মৃতদের সৎকার ও মৃত পশুপাখি পুঁতে ফেলা
§ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আহতদের উদ্ধারের কাজ শুরু করা। উদ্ধারের পরপরই তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা করা দরকার।
§ মৃতদের তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে ধর্মীয় মতে সৎকারের ব্যবস্থা করতে হবে।
§ মৃত পশু পাখিদেরও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।
§ গর্ত গভীর করে মৃতদেহ চাপা দেয়া দরকার। তানাহলে শেয়াল ও শকুনে মৃতদেহ মাটির নিচ থেকে বের করতে পারে।
২. টিউবওয়েল ও পায়খানা মেরামত করা
§ যে টিউবওয়েলগুলি ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল সেগুলো চালু রাখতে হবে। যেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে তা তাড়াতাড়ি মেরামত করতে হবে।
§ কলের মধ্যে লোনা পানি ঢুকলে এক টানা আধা ঘন্টা পানি বের করতে হবে। এরপর বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে।
§ পানি সরে যাওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পায়খানাগুলো মেরামত করতে হবে।
৩. একে অপরকে সাহায্য করা
§ দুর্যোগের পর অনেক সময় উড়োজাহাজে করে আকাশ থেকে সাহায্য ফেলা হয়। এই সাহায্য সবাই মিলে ভাগ করে নেয়া উচিত। যারা অসুস্থ ও বয়স্ক তাদের কাছে সাহায্য পৌছে দেয়া দরকার।
§ কোথাও সাহায্য দেয়া হলে বিশৃঙ্খলা না করে মিলেমিশে সাহায্য নেয়া দরকার।
§ যারা সাহায্য দেন তাদের নিয়মমত সাহায্য দিতে হবে। সাহায্যের ক্ষেত্রে খাবারের পুষ্টির গুনগত মান অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
§ দুর্যোগের পর প্রতিবেশির কোন জিনিস পেলে তাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে।
৪. পেটের অসুখ বা ডায়রিয়া মোকাবেলা
§ আধা সের বিশুদ্ধ পানিতে এক মুঠো গুড় মেশাতে হবে। সেই গুড় পানির শরবতে তিন আংগুলের সমান এক চিমটি লবণ দিতে হবে। এরপর লবণ, গুর ও পানি ভালোভাবে মেশালে স্যালাইন তৈরি হবে।
§ বাজার থেকে কিনে আনা প্যাকেট স্যালাইনও আধা সের পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
§ গুলানো স্যালাইন আধা ঘন্টার বেশি রাখা যায় না। গুলানো স্যালাইন গরম করলে এর উপকারিতা নষ্ট হয়।
§ খাওয়ার আগে ও পায়খানা করার পর ভালভাবে সাবান/মাটি/ছাই দিয়ে হাত ধূঁতে হবে।
§ খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে যেন মাছি না বসে।
৫. ফসল আবাদ করা
§ জমি থেকে আবর্জনা পরিস্কার করে মাঠের এক কোণায় রাখতে হবে। পওে এই আবর্জনাগুলো পঁচে সার তৈরি হবে।
§ মাঠ শুকানোর পর জমি গভীর করে চাষ করতে হবে।
§ বৃষ্টি না হলে ফসল বোনা বা রোপনের জন্য জমিতে সেচ দেয়া দরকার। এক্ষেত্রে লোনা নয় বা কম লোনা পানি দিয়ে সেচ দেয়া ভালো।
§ জমি তৈরি হলে ভুট্রা, ধান, খেসারি, চিনাবাদাম, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখি, কলমি, বথুয়া শাক আবাদ করা যায়। এছাড়া লোনা সইতে পারে এমন ফসল আবাদ করা যায়।
§ জলোচ্ছাসে সবজি বাগান নষ্ট হলে দ্রুত বীজ ও চারা সংগ্রহ করে সবজি চাষ করতে হবে।
§ ফল গাছ নষ্ট হলে দ্রুত উন্নত জাতের চারা লাগাতে হবে।
দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থানীয় কৌশলসমূহ
দু
§ উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানিতে যেন ঘর তলিয়ে না যায়, সেজন্য ঘরের ভিটা উঁচু করা হয়।
§ জোয়ারের পানিতে যেন ঘর তলিয়ে না যায়। সেজন্য অনেকে মাচার উপর ঘর করে।
§ জোয়ারের পানি/ জলোচ্ছাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাখাইনরা গাছের খুঁটির উপর দোতলা ঘর করে।
§ বর্তমানে রাখাইনদের অনুকরণে অনেকে কাঠের দোতলা ঘর করে জোয়ারের পানি ও জলোচ্ছ¡াসের পানি থেকে বাঁচার জন্য।
§ উপকূলীয় (আশারচর/নিদ্রারচর) এলাকায় অনেকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস আসার সাথে সাথে উঁচু কেওড়াগাছে আশ্রয় নিয়েছেন।
§ উপকূলীয় এলাকায় নারী প্রধান পরিবারগুলি হুগলা পাতার পাটি বোনে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করে।
§ উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের পানি/অতিরিক্ত পানি থেকে পুকুরের মাছ রক্ষার জন্য পুকুরের পাড় উঁচু করা হয় বা সুক্ষè জাল দিয়ে পুকুর চারিপাশে বেড়া দেয়া হয়।
§ উপকূলীয় এলাকায় অনেকে শক্ত গাছের সাথে মই বা বাঁশ বেঁধে রাখে যেন ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন আঘাত করলে দ্রুত গাছে উঠতে পারে এবং শক্ত ডালের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারে।
§ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আগে হাঁস মুরগি খাচায় বেঁধে গাছের উপর শক্ত করে বেঁধে রাখে।
§ গৃহ আঙ্গিনায় শিকরযুক্ত গাছ লাগায়।
§ উপকূল এলাকায় নৌকা, ট্রলার রক্ষার জন্য নদীর পাশে খারি কাটা হয়। এবং সেখানে নৌকা, ট্রলার নোংগর করা হয়।
§ নদীর পারে কেওড়া বন, হুগলা গাছের বন তৈরি করা হয়।
§ বাড়ির আশে পাশের গাছের ঢাল কেটে দেয়া হয়, যাতে বাতাসে গাছের ঢাল ভেঙ্গে না পরতে পারে।
§ জেলেদের জাল গাছের সাথে শক্ত করে পেঁচিয়ে বেঁধে রাখা।
§ টিউবওয়েলের মাথা খুলে রাখা ও মুখ শক্ত করে পলিথিন দিয়ে বেঁধে রাখা।
§ আশ্রয় কেন্দ্র না থাকলে গ্রামের সবচেয়ে শক্ত/মজবুত ঘরে আশ্রয় নেয়
§ বন্যাপ্রবণ চরে/গ্রামে নতুন বাড়ি করার সময় বাড়ির উঠানের চেয়ে ঘরের মেঝে অনেক উঁচু করা হয়। আবার রান্নার জায়গা ও গোয়াল ঘরও উঁচু করা হয়।
§ বন্যাপ্রবণ এলাকায় বসবাসকারী পরিবারের নারী পুরুষেরা স্থানান্তরযোগ্য মাটির চুলা তৈরি করে থাকে। উঠানে বা রান্না ঘরে পানি হলে মাচার উপওে বা চালের উপরে, বাধের উপরে, নৌকায় রান্না করে।
§ নিচু এলাকায় বোনা আমন ধানের মধ্যে দিঘা ধান লাগায়। পানি বাড়ার সাথে সাথে এ ধরণের ধানের গাছ ১৫ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
§ ঘরের মেঝেতে পানি ওঠার পরেও ঘরের মধ্যে চৌকি উঁচু করে বা মাঁচা উঁচু করে ঘরে বসবাস করার চেষ্টা করা হয়। পানি বাড়ার সাথে সাথে মাচা উঁচু করা হয়। এক পর্যায়ে পরিবারগুলি বন্যার উপরে বসবাস করতে দেখা যায়।
§ গোয়াল ঘরে বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে কাশবন, কলাগাছ ও অন্যান্য গাছ, লতাপাতা দিয়ে গরু রাখার চেষ্টা করা হয়।
§ মাটির পাত্রে বা কাচের বোতলে ফসলের বীজ বা সবজি বীজ রাখতে দেখা যায়।
§ বন্যার সময় ঘরে, ঘরের চালে বা উঁচু জায়গায় স্থানান্তরযোগ্য মাঁদা তৈরি করে সবজি চারা করা হয়। স্থানান্তরযোগ্য ছোট ছোট বীজ তলা তৈরি করা হয়।
§ নলকূপের মাথা ডুবে যাবার উপক্রম হলে বা ডুবে গেলে অতিরিক্ত পাইপ লাগিয়ে নলকূপের মাথা উঁচু করে নিরাপদ পানির সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়।
§ বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে তিলের ডাটা, গোবর, লতা-পাতা, জঙ্গল, কাশবন, ফসলের মাড়াইয়ের পরে গাছের গোড়ার অংশ আটি বেঁধে ঘরের মাচায় চালের সাথে বা উঁচু জায়গায় গাদা করে রাখা হয় যা বন্যার সময় লাকড়ি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
§ পুকুরের পাড় ডুবে যেতে থাকলে মাছ যাতে করে ভেসে না যায় তার জন্য জাল, টিন, বেড়া বা অন্য কিছু দিয়ে মাছ ঠেকানোর জন্য চেষ্টা করা হয়।
§ বন্যা প্রবণ নিচু এলাকায় নারী-পুরুষ সম্মিলিত ভাবে বসত ভিটায় মাটি তুলে উঁচু করে থাকেন।
§ বন্যার মৌসুমে চুরি ডাকাতির প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক ভাবে পাহাড়া দেয়া হয়।
§ পানির স্রোতের টানে/ঢেউয়ের কারণে বসতবাড়ির মাটি ধুয়ে না যায় তার জন্য বসতবাড়ির পাশে ডোলকলমি, কাশবন, কচুরিপানা, জঙ্গল, বাঁশ দিয়ে পানির আঘাত কমানো হয়।
§ পাড়া বা গ্রামের মধ্যে কোন রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট ভেঙ্গে গেলে গ্রামের নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে তা মেরামত বা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলাচল অব্যাহত রাখে।
§ নতুন চর জাগলে স্রোতের মুখে বারোয়ারিভাবে কাশবন বাষ করে পলি ও বালি জমার মাধ্যমে চর উঁচু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন